হিন্দু একটি ধর্ম। এই কথাটি কি ধর্মীয় গ্রন্থে উল্লেখ আছে?

হিন্দু শব্দটি ভারতীয়রা অতীতে ব্যবহার করতেন না। ফলে তাঁদের প্রাচীন কোনো ধর্ম গ্রন্থে এই শব্দের ব্যবহার নেই। সনাতন কথাটিও অবৈদিক। শ্বাশত শব্দটি গীতায় আছে। আসলে আমার যা মনে হয়েছে আমাদের দ্বীন বা রিলিজিয়ন হল ধর্ম। এখন আমরা ধর্ম শব্দটি Religion অর্থে ব্যবহার করার ফলে ধারণাগত একটি সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে!



হিন্দু কথাটি তাই বলে কোনো ধর্ম গ্রন্থে নেই এমন কিন্তু নয়। যাঁরা ভারতীয় হিন্দুদের আর্য নামে সম্বোধন করতেন, তাঁদের প্রাচীন শাস্ত্র জেন্দআবেস্তায় আছে। জেন্দআবেস্তা ঋকবেদের সমসাময়িক এবং এটি আরিয়ান (ইরান) দেশের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ। প্রাচীন আরিয়ান (ইরান) দেশে ভারতীয় আর্য ছাড়াও তাঁদের আর একটি শাখা বাস করতেন যাঁরা বর্তমানে পার্সী নামে পরিচিত। আরিয়ান (ইরান) দেশের অপর নাম পারস্য এবং সেখান থেকেই পারসিক বা পার্সী শব্দটি উদ্ভুত। উভয় আর্য সম্প্রদায়েরই ধর্ম, ধর্মগ্রন্থ, উপাস্যদেবতা সবই এক ছিল। একই ইন্দ্র বেদে বৃত্রঘ্ন, জেন্দআবেস্তায় বেত্রঘ্ন। ভগ – বগ, মিত্র – মিথ্র, বরুণ – অরুণস, অর্যমা – অইযর্মন, সোম – হোম। উভয় জাতিরই উপাসনাবিধি যজ্ঞ বা হোম, মন্ত্র এবং উভয় ধর্মগ্রন্থ বেদ ও জেন্দআবেস্তায় মন্দিরভিত্তিক পূজার কোন উল্লেখ নেই। তাছাড়া দুই সম্প্রদায়েরই বিবাহযজ্ঞে অর্যমা বা অইযর্মন দেবতার উদ্দেশ্যে আহুতিপ্রদান গত ১০, ০০০ বছর ধরে অদ্যাবধি চলে আসছে। নববর্ষ পালন ও একই দিনে, বাসন্তিক বিষ্ণুব দিবসে, অর্থাৎ বর্তমানে ২২ শে মার্চ। আর একটি উল্লেখযোগ্য বিষয়, উভয় ধর্মগ্রন্থেই সপ্তসিন্ধু বা সিন্ধু-সরস্বতী সহ সপ্ত নদীর উল্লেখ আছে এবং সেই নদীগুলিকে অতীব পুণ্যবতী আখ্যায় বর্ণনা করা হয়েছে।

সাদৃশ্যগুলি দেখে স্পষ্টত প্রতীয়মান হয়, উভয় জাতিই কোন একসময় ভারতবর্ষে বসবাস করতো। মহাপ্লাবনের পূর্বে সম্ভবত উভয় জাতিই ভারতবর্ষের আদি বাসস্থান ত্যাগ করে জীবনরক্ষার তাগিদে আরিয়ান (ইরান) দেশের উচ্চভূমিতে (পামীর মালভূমি) গিয়ে বাস করেছিল। মহাপ্লাবনের পরে জল সরে গেলে যাঁরা তাঁদের প্রাচীন পিতৃভূমি ভারতে ফিরে এসেছিলেন তাঁরা পরিচিত হয়েছিলেন আর্য বা ভারত নামে। বেদে সূর্যের অপর নাম হল ভরত। সূর্যকে উপাসনা করে আর্যরা ভারত নামেও পরিচিত ছিলেন। 

ঋকবেদের ২/৭/৫ ঋকে বলা হয়েছে – 
” ত্বং নো অসি ভারতাগ্নে”
..অর্থ – হে ভারত অগ্নি (সূর্য) তুমি আমাদের উপাস্য।

অপরদিকে আরিয়ান বা পারস্যে যাঁরা থেকে গিয়েছিলেন তাঁরা পরিচিত হয়েছিলেন পার্সী নামে। এই পার্সী সম্প্রদায় ‘স’ বর্ণকে ‘হ’ উচ্চারণ করতো। অসুরকে বলতো অহুর, সিন্ধুকে হিন্দু। তাঁদের ধর্মগ্রন্থ জেন্দআবেস্তায় উল্লিখিত আছে, সপ্তসিন্ধুকে হপ্তহিন্দু, সরস্বতীকে হরৈখতি নামে। তাঁরাই তাঁদের স্বধর্মীয় ভারতীয় আর্যদের সপ্তসিন্ধুর তীরে বসবাস করার কারণে “হিন্দু” নামে সম্বোধন করতেন। জেন্দআবেস্তাতেও হিন্দু শব্দের উল্লেখ আছে। এই সম্বোধন আজকের নয়। জেন্দআবেস্তা রচিত হয়েছিল ঋকবেদের আমলে। অর্থাৎ ঋকবেদের যুগ থেকেই ভারতীয় আর্যরা হিন্দু নামে সম্বোধিত ও পরিচিত হয়েছিলেন।

কৃতজ্ঞতা স্বীকার- হিন্দু আমাদের ধর্মের নাম - তপন আচার্য্য(বঙ্গ দেশ)
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post